বিশ্ব রাজনীতিতে কৃষ্ণ সাগর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ?
বিশ্ব রাজনীতিতে কৃষ্ণ সাগর বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণসাগরীয় উপকুলীয় এলাকা বিভিন্ন সময়ে নানান রক্তক্ষয়ী... more
Reading Time
6 Mins
View
363 View
Comment
0 Comment
Publish Date
22 Mar 2024
বিশ্ব রাজনীতিতে কৃষ্ণ সাগর বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণসাগরীয় উপকুলীয় এলাকা বিভিন্ন সময়ে নানান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি আর উত্তাল ঢেউ কৃষ্ণসাগরের নামের অন্যতম কারণ। কৃষ্ণসাগরের উঃপূঃ দিক দিয়ে রাশিয়া থেকে বয়ে আসা প্রবল বাতাসের কারনে এই সাগরের ঢেউ গুলির আকার বিশাল হয়ে থাকে। উপগ্রহ চিত্রে কৃষ্ণসাগরকে চারিদিকে স্থলভাগের দ্বারা ঘেরা বলে মনে হলেও আসলে তা কিন্তু নয়। কৃষ্ণসাগর উপকূল সংলগ্ন দেশগুলি তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই এই জলপথের দ্বারাই করে থাকে। বানিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারনে কৃষ্ণসাগরে তীরে প্রায় ত্রিশটি বানিজ্যিক বন্দর গড়ে উঠেছে।
এই সাগর তীরবর্তী দেশগুলির বর্হিরদেশীয় বানিজ্যের জন্য ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্তকারী মারমারা (Marmara) সাগরও একই কারনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মারমারা সাগর ভৌগোলিক দিক দিয়ে তুর্কি বা তুরস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন। মারমারা সাগরে উত্তর ও দক্ষিন অবস্থিত ফসফরাস ও জর্ডন প্রনালী মাধ্যমে কৃষ্ণসাগরের সাথে ভূমধ্যসাগরকে যুক্ত করে।
সাম্প্রতি সময়ে কৃষ্ণসাগর চারিপাশে যথাক্রমে ইউক্রেন, রাশিয়া, জর্জিয়া, তুরস্ক, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া দেশ অবস্থান করছে। সময়ের সাথে সাথে উপকূলীয় দেশগুলির নাম পরিবর্তিত হয়েছে, তবে কৃষ্ণ সাগর নিয়ে তাদের মধ্যে লড়াই আজও অব্যাহত রয়েছে। তবে এই সব দেশ গুলির মধ্যে রাশিয়া ও তুরস্ক সবচেয়ে প্রাভাবশালী ও শক্তিশালী রাষ্ট্র। সেকারনে স্বাভাবিকভাবে কৃষ্ণসাগরের উপর নিজেদের একচেটিয়া আদিপত্য ধরে রাখার জন্য উভয় দেশের মধ্য কয়েক দফা লড়াই হয়েছে ইতিপূর্বে।
কৃষ্ণসাগরের উপর নিজেদের প্রভাব কায়েম রাখার জন্য রুশ ও তুরস্কের দন্দ কয়েক শতাব্দি প্রাচীন। উভয় দেশের মধ্য কৃষ্ণসাগরকে কেন্দ্র করে এই পর্যন্ত কয়েক ডজন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। শুধুমাত্র রুশ-তুরস্ক নয় উপকূলীয় দেশগুলির নিজেদের মধ্যে দন্দের কেন্দ্রে কৃষ্ণসাগর। সাম্প্রতি সময়ে ঘটা 2014 সালে ইউক্রেনের ক্রেমিয়া ও 2008 সালে জর্জিয়ার আবখাজিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার সেনা অভিযান এর বড় প্রমাণ। কৃষ্ণসাগরের আদিপত্য নিয়ে তুরস্ক, উইক্রেন ও রাশিয়ার মত দেশগুলির মধ্যে কেনই বা এত আগ্রহ? কেনই বা নিজেদের প্রাধান্য ধরে রাখতে চায় এই দেশ গুলি?
কৃষ্ণসাগরের আদিপত্য নিয়ে তুরস্ক, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বেশি আগ্রহ দেখা যায় বর্তমানে। কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালি রাষ্ট্র হল রাশিয়া। দেশটির বৈদেশিক বানিজ্য সারাবছর সচল রাখতে কৃষ্ণসাগর ছাড়া আর কোন জলপথ নেই।দেশটির পূর্ব ও পশ্চিমে যথাক্রমে প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে শীতকালে বরফাচ্ছন্ন থাকার কারনে আইসব্রেকার ব্যবহার করে বানিজ্য পরিচালন করা ব্যয়বহুল ও কষ্ট সাক্ষেপ। তবে কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়ার বর্হিরবিশ্বে বানিজ্য করতে হলে মারমারা সাগর হয়ে তবেই ভূমধ্যসাগরে যেতে হয়। এই মারমারা সাগর আবার তুরস্ক অধীন স্থলভাগ বেষ্টিত। মারমারা সাগরে উত্তর ও দক্ষিন অবস্থিত ফসফরাস ও জর্ডন প্রনালী অবস্থানগত দিক দিয়ে তুরস্ক প্রশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারনে কৃষ্ণসাগরে বানিজ্যে তুরস্কের প্রভাব খুবই গুরুত্বপুর্ন। এই প্রনালীর মাধ্যমে কৃষ্ণসাগরে সামরিক ও বাণিজ্যিক যেকোন জাহাজের প্রবেশ ও প্রস্থানের উপর কড়া নজর রাখে তুর্কি প্রশাসন।
আর এখান থেকেই কৃষ্ণসাগরের আদিপত্য নিয়ে দশকের পর দশক ধরে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে নানা সময়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে। যদিও বর্তমান দেশ দুটি অতীতের তিক্ততা ভুলে বন্ধু রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। একদিকে তুরস্ক আমেরিকা-ইউরোপীয় সামরিক জোট ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশ ও অন্যদিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমানবিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ রাশিয়া একে অন্যের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে কৃষ্ণসাগরের শান্তি বজাই রেখে চলেছে।
তবে চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকাসহ অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত সদস্য দেশ ইউক্রেনের পক্ষ অবলম্বন করলেও তুরস্ক উভয় সঙ্কটে পড়েছে। একদিকে রাশিয়ার সাথে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক ও অন্যদিকে কৃষ্ণসাগরে ন্যাটো যুদ্ধ জাহাজের প্রবেশের আর্জি। রাশিয়ার পক্ষ নিলে তুরস্ক আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশ গুলির সাথে সুসম্পর্ক হারাবে, আবার তুরস্ক ন্যাটোর পক্ষ নিলে রাশিয়ার সাথে আবারও অতীতের নেয় সামরিক দন্দে পড়বে। কৃষ্ণসাগরের আদিপত্য সেকারনে কোন একক দেশের হাতে নেই বর্তমান। তুরস্ক ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও সৈন্যবলে এগিয়ে আছে। তবে রাশিয়ার আবার বিমানবাহী জাহাজ, জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। সেকারনে দিন শেষ কৃষ্ণসাগরের আদিপত্য সামরিক ক্ষমতা দিয়ে দুই দেশের পক্ষে জেতা অসম্ভব।